রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৩ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

আল্লাহর রহমতের আশা

মাওলানা ওয়ালী উল্লাহ:
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজরত আবু মুসা (রা.) ও হজরত মুআয (রা.)কে ইয়ামান প্রেরণ করার সময় বলেছিলেন, ‘তোমরা সহজ করো, কঠিন করো না। সুসংবাদ দাও, (হতাশ করে) বীতশ্রদ্ধ করো না। পরস্পর মেনে-মানিয়ে চলো, মতবিরোধ করো না।’ সহিহ বোখারি : ৩০৩৮

আশা কী

আশা বলা হয়, সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর অস্তিত্ব, অনুগ্রহ ও দয়াকে উপলব্ধি করা। তার দয়া ও অনুগ্রহের কথা মনে করে আনন্দিত হওয়া এবং এ বিষয়ে তার ওপর পূর্ণ ভরসা ও আস্থা রাখা। আশা মানুষের কলবকে আল্লাহ এবং জান্নাতের দিকে নিয়ে যায়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যে গোনাহ করে কিংবা নিজের অনিষ্ট করে, অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল, করুণাময় পায়।’ সুরা আন নিসা : ১১০

প্রকার

আশা তিন প্রকার। দুটি ইতিবাচক এবং একটি নেতিবাচক ও গর্হিত।

১. আল্লাহর প্রত্যাদেশ অনুযায়ী তার আনুগত্য করে সওয়াবের প্রত্যাশা করা।

২. কেউ গোনাহ করে তওবা করল এবং আল্লাহ তাকে মাফ করে দেবেন তার গোনাহকে ঢেকে রাখবেন মর্মে আশা করা।

৩. কোনো ব্যক্তি সীমা লঙ্ঘন, পাপ ও গোনাহ অব্যাহতভাবে করতে থাকল এবং আল্লাহর রহমত ও মাফের আশা করল। এটা একটি ধোঁকা এবং মিথ্যা আশা। এমন আশার কোনো মূল্য নেই। মুমিনের আশা, আমলের দ্বারা পূর্ণ হয়ে থাকে। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আর এতে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই যে, যারা ইমান এনেছে এবং যারা হিজরত করেছে আর আল্লাহর পথে লড়াই (জেহাদ) করেছে, তারা আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশী। আর আল্লাহ হচ্ছেন ক্ষমাকারী করুণাময়।’ সুরা আল-বাকারা : ২১৮

স্তর

আশার অনেক স্তর রয়েছে। যার একটি অপরটি থেকে উন্নত। স্তরগুলো হলো

এমন আশা যা ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল হতে উৎসাহিত করে। ইবাদতকে তার কাছে উপভোগ্য করে তোলে। যদিও সে ইবাদত কঠিন ও কষ্টসাধ্য হয়। এ আশা তাকে গোনাহ ও গর্হিত কাজ থেকেও বিরত রাখবে।

আল্লাহকে পাওয়ার সাধনায়রত ব্যক্তিদের আশা। যা তারা কুপ্রবৃত্তির চাহিদাগুলো পরিত্যাগ এবং তাদের সৃষ্টিকর্তার পছন্দনীয় বিষয়গুলোর জন্য বাধাগ্রস্ত হয়, এমন কাজকে পরিত্যাগ করার মাধ্যমে করে থাকে। যাতে তাদের কলব আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠ হয়ে যায়।

পুনরুত্থানকারী মহান স্রষ্টার সঙ্গে মিলিত হওয়ার আশা করা, তার সঙ্গে সাক্ষাৎ লাভের জন্য ব্যাকুল থাকা এবং অন্তরজুড়ে একমাত্র আল্লাহর দীদার লাভের প্রবল ইচ্ছা থাকা। আশার প্রকারগুলোর মধ্যে এটা হচ্ছে সর্বোত্তম ও সর্বোচ্চ মর্যাদার। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘অতএব, যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন, সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তার পালনকর্তার ইবাদতে কাউকে শরিক না করে।’ সুরা আল কাহাফ : ১১০

যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে উপরোল্লিখিত কোনো প্রকারের আশা পোষণ করে, সে নিরবচ্ছিন্নভাবে আল্লাহর আনুগত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত ও ইমানের দাবির ওপর অটল থাকে। সে আল্লাহর কাছে আশা করে যে, আল্লাহ তাকে বক্র করবেন না। তার আমলগুলো ফেরাবেন, কবুল করবেন। তার সওয়াব ও প্রতিদান বাড়িয়ে দেবেন। সে আল্লাহর অনুগ্রহের আশায় সাধ্যমতো সব চেষ্টা করে। আল্লাহর পরিচয়, তার নামগুলো এবং গুণাবলি সম্পর্কে অবহিত হওয়ার কারণে সে জানে যে আল্লাহ তার সঙ্গে ক্ষমাশীল আচরণ করবেন। তিনি পুরো দুনিয়ার জন্যই দয়ালু। তিনি সবাইকে নিরাপত্তা দান করবেন।

ফলাফল

যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি আশা রাখে সে আনুগত্য ও আমল বৃদ্ধির চেষ্টা অব্যাহত রাখে।

এমন ব্যক্তির আনুগত্য নিরবচ্ছিন্ন হয়ে থাকে। অবস্থার পরিবর্তন তার পথচলাকে ব্যাহত করতে পারে না।

এমন ব্যক্তি সর্বদা আল্লাহর নৈকট্য লাভের প্রতি মনোযোগী থাকে। তার মাঝে থাকে আল্লাহর কাছে মোনাজাতের প্রচণ্ড বাসনা। সে নম্রতা ও মিনতি নিয়ে তার কাছে প্রার্থনা করে।

তার মধ্যে পরিপূর্ণ দাসত্ব প্রকাশ পায়। অভাব ও প্রয়োজন পূরণের ভার সে পুরোপুরি রবের ওপর সোপর্দ করে। সে এক মুহূর্তও নিজেকে আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়ার অমুখাপেক্ষী মনে করে না।

আল্লাহর অস্তিত্ব ও অনুগ্রহের ওপর তার পরিপূর্ণ আস্থা সৃষ্টি হয় এবং এ বিশ্বাস সৃষ্টি হয় যে তার কাছে প্রার্থনা করে, অথবা তার রাহে দান করে, তার জন্য তিনি অধিক দানশীল। তিনি চান বান্দা তার নিকট প্রার্থনা করবে, আশা করবে এবং বারবার আশা করতেই থাকবে।

আশা বান্দাকে আল্লাহর ভালোবাসার চৌকাঠে নিয়ে ফেলে। তাকে ভালোবাসার পরাকাষ্ঠায় নিয়ে যায়। অতঃপর যখনই তার আশা তীব্র হয়, সে যা আশা করে তা লাভ করে। তখন রবের প্রতি তার ভালোবাসা, কৃতজ্ঞতা এবং সন্তুষ্টি বৃদ্ধি পায়। আর এটাই বন্দেগির মূল দাবি বা ভিত্তি।

আশা পোষণকারী ব্যক্তি সর্বদা আগ্রহী, ভীত এবং তার রবের অনুগ্রহের প্রত্যাশী হয়। আল্লাহর প্রতি তার উত্তম ধারণা সৃষ্টি হয়। মুমিন ব্যক্তি তার রবের প্রতি সুধারণা পোষণ করে। তার আমল হয় অত্যন্ত সুন্দর। আর পাপাচারী ব্যক্তি তার রবের প্রতি মন্দ ধারণা পোষণ করে বিধায় তার আমলও হয় খারাপ। যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি সুধারণা পোষণ করে সে বিশ্বাস করে, তার কাছে আশ্রয় গ্রহণকারী ব্যক্তিকে আল্লাহতায়ালা ধ্বংস করবেন না।

আশা মানুষকে কৃতজ্ঞতার সোপানে নিয়ে যায়। কেননা আশা তাকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশে উদ্বুদ্ধ করে।

আশা বান্দাকে আল্লাহর নাম এবং গুণাবলির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয় যে, তিনি মহান দয়ালু, সম্মানিত, দোয়া কবুলকারী, সুন্দর, অমুখাপেক্ষী।

আল্লাহর প্রতি আশা মানুষের কামনা-বাসনা পূর্ণ হওয়ার উপায়। আর কাক্সিক্ষত বাসনা পূর্ণ হওয়ার ফলে বান্দা আরও বেশি দোয়ার প্রতি প্রলুব্ধ ও আল্লাহর দিকে মনোযোগী হয়। এমনিভাবে বান্দার ইমান বৃদ্ধি হতে থাকে এবং সে দয়াময়ের নিকটবর্তী হতে থাকে।

কেয়ামতের দিন মুমিনগণ আল্লাহর সন্তুষ্টি, জান্নাত ও প্রতিপালকের দর্শন ইত্যাদি নেয়ামত লাভের মাধ্যমে যখন নিজের আজীবনের লালিত আশার প্রতিফলন দেখতে পাবে, তখন সে উল্লসিত হবে। আর এসব অর্জন হবে আল্লাহর প্রতি বান্দার আশা ও ভয়ের অনুপাতে।

আশা-নিরাশা বিষয়ে সতর্কতা

মুমিনের জন্য আশা পোষণের পাশাপাশি ভয় করাও জরুরি। আল্লাহর প্রতি ভয়ের ক্ষেত্রেও পাশাপাশি আশা পোষণ অত্যাবশ্যকীয়। সুতরাং যে ক্ষেত্রে আশা পোষণ করা উচিত সেখানে ভয়ও থাকতে হবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের কী হলো যে, তোমরা আল্লাহতায়ালার শ্রেষ্ঠত্ব আশা করছ না।’ সুরা নুহ : ১৩

আশা হচ্ছে এমন ওষুধ, প্রতি মুহূর্তেই আমরা তার মুখাপেক্ষী। নফসের ওপর যখন নিরাশা ভর করে, তখন ইবাদত-বন্দেগি থেকে মন উঠে যায়। ব্যক্তির ওপর ভয় যখন অতিমাত্রায় প্রভাব বিস্তার করে, তখন তার ও তার পরিবারের জন্য অনেক ক্ষেত্রে ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত হয়। অতঃপর তার এই ভয় একপর্যায়ে শরিয়তের কাক্সিক্ষত সীমা লঙ্ঘন করে। সে ক্ষেত্রে যে বিষয়টি তাকে ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে আসবে, সেটি অবলম্বন করা উচিত। আর তা হচ্ছে- আশা। আশা হলো- মুমিনের স্বভাবজাত বিষয়।

আশা হলো, নিরাশার বিপরীত। নিরাশা আল্লাহর রহমত সম্পর্কে হতাশা সৃষ্টি করে এবং আল্লাহর কাছে অনুগ্রহের আশা করা থেকে মনকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এটা গোমরাহী ও কুফরির কারণ। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘এবং আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহর রহমত থেকে কাফের সম্প্রদায় ব্যতীত অন্য কেউ নিরাশ হয় না।’ সুরা ইউসুফ : ৮৭

ইমাম ইবনে কাসির (রহ.) বলেন, ‘ভয় এবং আশা ব্যতীত ইবাদত পরিপূর্ণ হবে না। ভয় অশ্লীল কাজ থেকে বিরত রাখে আর আশা দ্বারা আনুগত্য বৃদ্ধি পায়।’

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION